মানুষ তার চোখ, কান, নাক দিয়ে পরিবেশ থেকে বিভিন্ন অনুভুতি নিতে পারে। কিন্তু যন্ত্রপাতি! তার জন্য চাই সেন্সর যা কিনা পরিবেশের কোন ঘটনাকে বৈদ্যুতিক সিগন্যালে রুপান্তরিত করতে পারে। এরকম কিছু সেন্সরের সাথে পরিচিত হওয়া যাক...
LDR
LDR মানে হল Light Dependable Resistor বা আলোর উপর নির্ভরশিল রেসিস্টর। বোটকা সাইজের রেসিস্টরগুলোর ভ্যালু পরিবর্তন করা যায় না। তবে LDR এর মান এর উপর আলোর উপর নির্ভর করে। মানে তীব্র আলোতে এর মান 10 ওহম এর কাছাকাছি নেমে আসে আবার একেবারে অন্ধকারে সেটা 20 মেগা ওহম (মানে হল ২০ লক্ষ ওহম!) এ গিয়ে দাঁড়ায়। নিচের ছবিটায় একটা LDR আছে,
আলো অন্ধকারের তারতম্য করে চলে এমন রোবট, দিনের আলোর পরিবর্তনের সাথে সম্পর্কিত কোন প্রজেক্ট, কাউন্টার ইত্যাদি নানা প্রজেক্টে এটা ব্যাবহার করা যায়।
তাপমাত্রা সেন্সর ( LM35 )
তাপমাত্রা বা টেম্পারেচার সেন্সর। তাপমাত্রা বাড়ার সাথে সাথে এটা হাই ভোল্টজ দিতে থাকে আর কমার সাথে সাথে লো ভোল্টেজ। যে ভোল্টেজ ভ্যালু পাচ্ছি সেটাকে মাইক্রোকন্ট্রোলার দিয়ে চেখে নিলেই হল, যেকোন কাজে ব্যাবহার করা যাবে সহজেই। নিচের ছবিটা একটা LM35 সেন্সরের,
তাপমাত্রার সাথে সম্পর্কিত কোন প্রজেক্ট, রুম টেম্পারেচার কন্ট্রোলার, রোবট ইত্যাদি অনেক জায়গায় একে ব্যাবহার করা যায়।
ফটোট্রানসিস্টর (Phototransistor)
নাম শুনেই বোঝা যাচ্ছে এটা একটা ট্রানসিস্টর, কিন্তু কাজ করে যখন এর উপর আলো পড়ে। আলো এখানে ট্রানসিস্টরের Base পিনের মত কাজ করে। সহজ করে বললে, এর উপর আলো পড়লে বাকি দুটো পিনের মধ্যে কারেন্ট প্রবাহিত হয়, অন্ধকারে হয় না। মানে সুইচের মত।
আলোর প্রবাহে বাধা দিয়ে এই ট্রানসিস্টরগুলোকে সুইচ হিসেবে কাজে লাগানো যায়। তাই বিভিন্ন ধরনের রোবট, কাউন্টার, বাসার লাইট ফ্যান কন্ট্রোল থেকে শুরু করে অ্যাসেম্বলি লাইন অনেক জায়গাতে একে ব্যাবহার করা যায়।
ডিসটেন্স বা দুরত্ব সেন্সর (Sonar Sensor)
ব্যাপারটা অনেকটা বাদুরের পথচলার মত। বাদুর পথ চলার সময় উঁচু ফ্রিকোয়েন্সির শব্দ করে এগুতে থাকে, শব্দ বাধা পেয়ে ফিরে এলে মধ্যবর্তী সময় বুঝে দুরত্ব বের করে নেয়। নিচের মডিউলটা এক্কেবারে হুবহু তাই করে।
দুরত্ব মাপার জন্য বিভিন্ন রোবটে, পথে কোন বাধা আছে কিনা সেটা বুঝতে, পানির নিচে কমিউনিকেশনের জন্য- ইত্যাদি নানান কাজে ব্যাবহার হয় এটা ।
টাচ বা স্পর্শ সেন্সর
নাম শুনেই বোঝা যাচ্ছে, স্পর্শ করলে এখান থেকে সিগন্যাল বেরোয়।
স্পর্শকাতর যেকোন কিছু বানাতে(!) এটা কাজে লাগে। ধরা যাক রোবটের হ্যান্ডে কোন কিছু ধাক্কা লাগল কিনা- এটা বোঝার জন্যও টাচ বা স্পর্শ সেন্সর কাজে লেগে যেতে পারে।
প্রেসার বা চাপ সেন্সর
নিচের ছবিটাতে যে ছোট্ট ফুটো আছে, সেখানে বাতাসের চাপ (যেমন কোন পাইপ দিয়ে) প্রয়োগ করলে চাপের উপর নির্ভর করে এটা বিভিন্ন সিগন্যাল জেনারেট করে।
বাতাস এর চাপ মাপার জন্য খুব ভালো কাজে লাগে এটা।
ম্যাগনেট বা চুম্বক সেন্সর (Hall Effect Sensor and Reed Switch)
চুম্বকের উপস্থিতিতে এটার সিগন্যাল ভালু পরিবর্তিত হয়।
ম্যাগনেট এর ব্যাবহার আছে এমন প্রজেক্টে, অটোমেটিক ডোর লকিং সিস্টেম- এমন জায়গায় এগুলো ভাল কাজে লাগে।
হিউমিডিটি বা আর্দ্রতা সেন্সর (Humidity Sensor)
নাম শুনেই বোঝা যাচ্ছে কি করে এটা। বাতাসের আর্দ্রতা পরিবর্তনের সাথে সাথে এর সিগন্যালও পরিবর্তিত হয়।
আর্দ্রতা মাপতে বেশ পটু এই সেন্সর। রুমের আর্দ্রতা থেকে শুরু করে ইন্ডাস্ট্রি স্পেসে নির্দিস্ট আর্দ্রতা ধরে রাখা- এরকম অনেক কাজে এটা কাজে লাগে।
মোশন বা মুভমেন্ট সেন্সর (PIR Motion sensor)
মোশন সেন্সর আরো মজার জিনিস। এটা করে কি, সামনে কোন কিছু নড়তে দেখলেই সজাগ হয়ে ওঠে। তারপর ধুম করে সিগন্যাল ভোল্টেজ পাঠিয়ে দেয়।
মোশন কিংবা যেকোন নাড়াচাড়া বোঝার জন্য এটা কাজে লাগে। তাই সিকিউরিটি সিস্টেম থেকে শুরু করে ট্রাফিক কন্ট্রোল- বিভিন্ন জায়গায় এটা কাজে লাগে।