বিগল টু |
মঙ্গল গ্রহে গিয়ে হারিয়ে গিয়েছিল যুক্তরাজ্যে নির্মিত অনুসন্ধানী রোবটযান বিগল টু। এক দশকেরও বেশি সময় পরে ‘লাল গ্রহের’ পৃষ্ঠেই এটির খোঁজ মিলেছে। যুক্তরাজ্যের মহাকাশ সংস্থা গতকাল শুক্রবার এ খবর জানিয়েছে।
মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থার (নাসা) মহাকাশযান মার্স রিকনেসান্স অরবিটারের (এমআরও) তোলা কয়েকটি ছবিতে বিগল টু ও তার প্যারাস্যুটের অংশবিশেষ ধরা পড়ে। বিজ্ঞানীরা বলেন, রোবটযানটির সঙ্গে আবার যোগাযোগ স্থাপন বা সেটি থেকে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করা সম্ভব হবে না।
যুক্তরাজ্যের মহাকাশ সংস্থার প্রধান ডেভিড পার্কার বলেন, বিগল টু সফলভাবেই মঙ্গলপৃষ্ঠে অবতরণ করেছিল। ছবিগুলো তারই প্রমাণ। অভিযানটির পেছনে কঠোর পরিশ্রম ছিল। কিন্তু কেন এটি ব্যর্থ হয়েছিল, তা রহস্যই রয়ে গেছে।
বিগল টুর অভিযানে কাজ করেছিলেন মহাকাশবিজ্ঞানী কলিন পিলিংগার। রোবটযানটি মঙ্গলে ঠিকভাবে অবতরণ করেছিল—এ খবর না জেনেই তিনি গত বছর মারা যান। পার্কার বলেন, ‘সত্যি কথা বলতে কী, আমি বিগল টুর পরিণতি কখনো জানতে পারব—এমন আশা ছেড়েই দিয়েছিলাম।’
ব্রিটিশ প্রকৃতিবিদ চার্লস ডারউইনের জাহাজ এইচএমএস বিগলের নামানুসারে রোবটযানটির নাম দেওয়া হয় বিগল টু। এটি দেখতে ছিল সুবিশাল পকেটঘড়ির মতো। পাপড়ির মতো কয়েকটি সৌর প্যানেল মেলে দিতে পারত। এতে আরও ছিল যান্ত্রিক একটি হাত এবং গবেষণার কিছু সরঞ্জাম। আড়াআড়িভাবে রোবটযানটির বিস্তার ছিল দুই মিটারেরও কম। মঙ্গল গ্রহে প্রাণের চিহ্ন অনুসন্ধানের জন্যই বিগল টু তৈরি করা হয়েছিল। এ অভিযানে মোট ব্যয় হয়েছিল প্রায় পাঁচ কোটি ব্রিটিশ পাউন্ড।
রাশিয়ার বাইকোনুর উৎক্ষেপণকেন্দ্র থেকে ২০০৩ সালে ইউরোপীয় মহাকাশ সংস্থার (ইএসএ) রকেটে চড়ে ‘লাল গ্রহ’ অভিমুখে রওনা হয় বিগল টু। যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার পর এত বছর রোবটযানটির কোনো খোঁজ না পেয়ে বিজ্ঞানীরা ধরে নিয়েছিলেন, মঙ্গলের আবহমণ্ডলে হয়তো পুড়ে ধ্বংস হয়ে গেছে বিগল টু।
কিন্তু এখন ওই অভিযানের ব্যাপারে ধারণা পাল্টে গেছে। ইএসএর মহাপরিচালক জ্যঁ-জ্যাক দর্দাঁ প্যারিসে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, ১১ বছর আগে যে অভিযানকে ব্যর্থ বলে মনে করা হয়েছিল, আসলে সেটা একেবারে ব্যর্থ ছিল না। অন্তত মঙ্গলের মাটিতে অবতরণ তো করতে পেরেছিল বিগল টু।
পার্কার আরও বলেন, মহাকাশ অভিযানের ইতিহাসে সাফল্য ও ব্যর্থতা—দুটিই উল্লেখযোগ্য। বর্তমান আবিষ্কার এটাই প্রমাণ করে যে বিগল টুর অভিযান বিজ্ঞানীদের আগের ধারণার চেয়ে বেশি সার্থক হয়েছিল। আর মঙ্গল অভিযানের জন্য ইউরোপীয় প্রচেষ্টার ক্ষেত্রে এটি ছিল নিঃসন্দেহে এক বড় পদক্ষেপ।
ইএসএর মার্স এক্সপ্রেস অভিযানের অংশ ছিল বিগল টু। ২০০৩ সালের বড়দিনে মঙ্গল গ্রহে অবতরণ করার কথা ছিল রোবটযানটির। কিন্তু ওই বছরের ১৯ ডিসেম্বর এটি নিখোঁজ হয়। এখন এমআরওর ছবিতে রোবটযানটিকে কাঙ্ক্ষিত অবতরণস্থলের মাত্র পাঁচ কিলোমিটার দূরে অক্ষত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখা যাচ্ছে। ছবি বিশ্লেষকেরা বলছেন, নিশ্চিতভাবেই এটি বিগল টুর ছবি।
বিগল টু অভিযানের ব্যবস্থাপক এবং যুক্তরাজ্যের নিলচেস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মার্ক সিমস বলেন, রোবটযানটির বেতার তরঙ্গের অ্যানটেনা সৌর প্যানেলে চালিত হওয়ায় পৃথিবী থেকে এটির সঙ্গে নতুন করে যোগাযোগ স্থাপনের সুযোগ ছিল না। কী কারণে অভিযান ব্যর্থ হয়েছিল, তা সঠিকভাবে বলার উপায় নেই। সম্ভবত মঙ্গলপৃষ্ঠে জোরে আছড়ে পড়ে বিগল টুর কাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। অথবা এটির সৌর প্যানেলগুলো পর্যাপ্ত শক্তির জোগান দিতে পারেনি। অথবা রোবটযানটির বায়ুভর্তি থলে ছিদ্র হয়ে গিয়েছিল কিংবা ধীরে ধীরে শূন্য হয়ে পড়েছিল।
সূত্র: এএফপি, রয়টার্স ও বিবিসি