শুক্রবার, ১ মে, ২০১৫

নাসার ম্যাসেঞ্জার অভিযানের ইতি..

·   0


মহাশূন্যে এক দশকের বেশি সময় বিচরণ এবং বুধ গ্রহকে চার বছর প্রদক্ষিণ করার পর মার্কিন মহাকাশ সংস্থার (নাসা) অনুসন্ধানী নভোযান ম্যাসেঞ্জারের যাত্রা শেষ হচ্ছে। বুধের পৃষ্ঠে গতকাল বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ সময় গভীর রাতে নভোযানটির বিধ্বস্ত হওয়ার কথা।

ম্যাসেঞ্জারের জ্বালানি গত ২৪ এপ্রিল ফুরিয়ে যায়। এটি ২০১১ সালে বুধ গ্রহের কাছাকাছি পৌঁছানোর পর সেটির কক্ষপথে এক বছর অবস্থান করার অভিযান সফলভাবেই সম্পন্ন করে। বিজ্ঞানীদের হিসাব অনুযায়ী, বুধ পৃষ্ঠের দিকে ধীরে ধীরে এগিয়ে গেলেও ৫১৩ কেজি ওজন ও তিন মিটার প্রস্থের নভোযানটি সেখানে ঘণ্টায় ১৪ হাজার কিলোমিটার বেগে আঘাত হানতে পারে। এতে গ্রহটির উত্তর মেরুতে প্রায় ১৬ মিটার গভীর একটি গর্ত তৈরি হবে। আর এ সংঘর্ষের মধ্য দিয়ে ইতিহাস সৃষ্টিকারী নভোযানটির অভিযানের পরিসমাপ্তি ঘটতে যাচ্ছে।
বুধ গ্রহে ঘন বায়ুমণ্ডল নেই বলে বাইরে থেকে ছুটে আসা বস্তু কোনো বাধা পায় না। এ কারণেই গ্রহটিতে প্রতি দুই-এক মাস পর পর উল্কাপিণ্ড আঘাত হানে। আর সেগুলো প্রচণ্ড গতিতে বুধের দিকে ছুটে যায়।
ম্যাসেঞ্জারের অভিযান নির্ধারিত সময়ের চেয়ে দ্বিগুণ দীর্ঘায়িত হয়েছে। এতে বুধ সম্পর্কে বিজ্ঞানীদের ধারণায় অনেক পরিবর্তন এসেছে। নভোযানটি ওই গ্রহের অন্তত ২ লাখ ৭০ হাজার ছবি এবং বিপুল পরিমাণ (১০ টেরাবাইট) বৈজ্ঞানিক তথ্য-উপাত্ত পৃথিবীতে পাঠিয়েছে। পাশাপাশি গ্রহটির মেরু অঞ্চলের একাধিক খাদে লুকানো বরফের চিহ্ন পেয়েছে। তা ছাড়া আবিষ্কার করেছে যে বুধ গ্রহের চৌম্বকক্ষেত্র অদ্ভুতভাবে কেন্দ্র থেকে দূরে অবস্থান করছে।
ম্যাসেঞ্জার বুধের চারপাশে উপবৃত্তাকার কক্ষপথে ঘুরে বেড়িয়েছে, যা গ্রহটির ব্যাসের প্রায় দ্বিগুণ। নভোযানটির অভিযানে বুধের সবচেয়ে নিকটবর্তী দূরত্ব ছিল ৯৬ কিলোমিটার। গ্রহটিকে অন্তত তিন হাজার বার প্রদক্ষিণ করেছে ম্যাসেঞ্জার।
যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিদ জিম রেইনস বলেন, ম্যাসেঞ্জারের অন্তিম মুহূর্তের দৃশ্যটি অত্যন্ত দর্শনীয় হওয়ার কথা। এটি মাত্র এক থেকে দুই সেকেন্ডে দিগন্ত পেরিয়ে যাবে এবং সুপারসনিক বিমানের চেয়ে ১০ গুণ বেশি গতিতে উড়ে গিয়ে বুধ পৃষ্ঠে বিস্ফোরিত হবে।
ম্যাসেঞ্জারের ক্যামেরায় তোলা বুধ গ্রহের ছবি বিশ্লেষণকারী গবেষক ন্যান্সি চ্যাবট বলেন, বুধ পৃষ্ঠের যেখানে ম্যাসেঞ্জার আঘাত হানবে, সেটা সমতল এলাকা। আঘাতের ফলে একটি তেরছা মুখওয়ালা গর্ত তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
ওই আঘাতের প্রভাব পড়বে বুধ গ্রহের যে অংশে, তা পৃথিবীর উল্টোদিকে অবস্থান করছে। তবে সেখান থেকে ম্যাসেঞ্জার শেষ মুহূর্তে হাজার খানেক ছবি পাঠাতে পারবে বলে আশা করা হচ্ছে। নভোযানটির ক্যামেরায় প্রতিবছর শত শত ছবি তোলা হয়েছে। চলতি মাসের শুরুতেও নাসার বিজ্ঞানীরা ম্যাসেঞ্জারের তোলা বুধের নতুন কয়েকটি ছবি প্রকাশ করেন।
বুধ সম্পর্কে অনুসন্ধানের যে লক্ষ্য নিয়ে ম্যাসেঞ্জার যাত্রা শুরু করেছিল, অভিযানে তার চেয়ে অনেক বেশি অর্জিত হয়েছে। আর নাসার এ অভিযাননির্ভর গবেষণার কয়েকটি ফলাফল রীতিমতো বিস্ময়কর। যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব কলোরাডো বোল্ডারের গবেষক উইলিয়াম ম্যাকক্লিনটক বলেন, বুধ গ্রহের কক্ষপথে গিয়ে এত দীর্ঘ সময় ধরে অবস্থান করা এবং অনুসন্ধান চালানো একটি নভোযানের পক্ষে অনেক বড় অর্জন। গ্রহটি সম্পর্কে মানুষের আগে যে রকম ধারণা ছিল, এই অভিযানের মাধ্যমে তা অনেকটাই পরিবর্তিত হয়েছে।
সূত্র: বিবিসি